Tuesday 4 June 2019

সমগ্র বিশ্বে কি একই তারিখে ঈদ পালন করা সম্ভব ?


                    সমগ্র বিশ্বে  কি একই তারিখে   ঈদ পালন করা সম্ভব ?

 প্রতি বছর রোজা ঈদ এলেই তার সময় দিনক্ষণ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। সাধারণত দেখা যায় যেদিন সৌদি আরবে রোজা ঈদ হচ্ছে বাংলাদেশে তার পরদিন ঈদ রোজা হয়। আবার দেশের কয়েকটি জায়গায় সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা ঈদ পালন করেন দেশের কিছু সংখ্যক মানুষ। এবিষয়টি নিয়ে দেশের আলেম সমাজের মাঝে অনেক বিতর্ক হলেও কোনো সমাধান এখনও আসেনি। এমনকি ২০১৭ সালে দুই পক্ষের ১৫ জন করে সমান সংখ্যক আলেম বিশেষজ্ঞ নিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বিতর্কের আয়োজন করেও তার কোনো কুল কিনারা করতে পারেনি।

যারা দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় পবিত্র ঈদ উল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে

সুরেশ্বর দরবারের অনুসারী, চাঁদপুর চট্টগ্রামের কিছু জায়গায় সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে অনেক আগে থেকেই কয়েকটি গ্রামের মানুষ রোজা ঈদ করে আসছেন। সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ১৯২৮ সাল থেকে হানাফি মাজহাবের অনুসারীরা বাংলাদেশে ঈদ উদযাপন করে আসছেন এছাড়া সারাদেশের লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, শরীয়তপুর, কুমিল্লা, ভোলা, চট্টগ্রাম, ঝিনাইদহ, বরিশাল, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, শেরপুর, পটুয়াখালী মৌলভীবাজারের বিভিন্ন এলাকায় সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করা হচ্ছে

এবিষয়ে সুরেশ্বর দরবারের বর্তমান গদীনশীল পীর সৈয়্যেদ নুরে আখতার হোসাইন আহমদনুরীর বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে এই কথাটি সঠিক নয়, আমরা মনে করি পৃথিবীর যেখানেই চাঁদ দেখা যাবে তার খবরের ভিত্তিতে ঈদ রোজা পালন শুরু হবে। যেহেতু একদিনে বিশ্বব্যাপী জুমআ আদায় করা হয়। সেহেতু একইদিনে ঈদ রোজা পালন সম্ভব। আর এবিষয়ে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশানের (ওআইসি) একটি সিদ্ধান্ত আছে, “যার বাস্তবায়ন আমরা চাই

উল্লেখ, বিশ্বের ৫৭টি মুসলিম দেশ এবং সকল মুসলিমের প্রতিনিধিত্বকারী বিশ্ব মুসলিম সংগঠন , আই, সি-এর ফিকহ একাডেমী ১৯৮৬ সনের ১১-১৬ অক্টোবর জর্ডানের রাজধানী আম্মানে অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে শতাধিক শরীয়াহ্ বিশেষজ্ঞের সর্ব সম্মতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, “বিশ্বের যে কোনো দেশে চাঁদ উঠলেই স্থানীয় সময় অনুযায়ী একই দিনে রোজা ঈদ পালন করা হবে। কিন্তু ওআইসির সদস্য হলেও সেই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশে কার্যকর হয়নি

এবিষয়ে ওআইসি ফিকহ একাডেমির বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক . সাইয়েদ আব্দুল্লাহ্ আল-মারূফ আরটিভি অনলাইনকে বলেন, বিশ্বব্যাপী একইদিনে ঈদ রোজা করার বিষয়ে আলেম সমাজ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে অনেক তর্ক বিতর্ক হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে যে বিতর্কের আয়োজন করা হয়েছিল সেখানে উপযুক্ত প্রমাণ দেখানোর পরেও সরকার অজানা কারণে ওআইসির সিদ্ধান্ত মানতে অপারগতা প্রকাশ করে।  তিনি বলেন, হাদিসে এসেছে তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখো চাঁদ দেখে রোজা ছাড়। এখানে কোনো নির্দিষ্ট জায়গার কথা বলা হয়নি। এখন বিজ্ঞানের যুগ। চাঁদ কখন উঠবে তার খবর আগে থেকেই জানা যায়।


অন্যদিকে, ভারতীয় উপমহাদেশের বেশিরভাগ আলেমগণ ওআইসি ফিকহ একাডেমির  এই সিদ্বান্ত পালন করেন না উনারা  ব্যাখ্যা  করেন, যখন যে দেশে চাঁদ উঠবে তখন সে দেশে রোজা ঈদ পালন করা হবে   অধিকাংশ আলেমগণই বলছেন, সহিহ হাদিস দ্বারা একথা প্রমাণ করা যায় না যে, একই দিনে সারাবিশ্ব ঈদ রোজা রাখবে। এসম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখো এবং চাঁদ দেখে ছাড়। তবে যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে, তাহলে মাসের হিসাব ৩০ দিনে পূর্ণ করে নাও।(বুখারি, হাদিস : ১৮১০)
 আলেমগণ আরো ব্যাখ্যা  করেন,  তিরমিজি শরিফে পরিস্কার লিখা আছে প্রত্যেক শহরের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সময় অনুযায়ী তারা ঈদ পালন করবে।

হাদিসটির বর্ণনায়  বলেন, সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে খলিফাতুল মুসলিম আমির মুয়াবিয়া (রা.) এর কাছে গেলেন মদিনার দূত কুরায়েব। তখন দামেস্কে রমজানের চাঁদ দেখা যায়। জুমআ রাতে সেই চাঁদ দেখা যায়। এরপর মাস শেষে যখন মদিনায় তিনি ফিরলেন, তখন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)তার কাছে চাঁদ দেখা সম্পর্কে জানতে চান। তিনি বলেন, আমরা জুমআ রাতে চাঁদ দেখি। তিনি জানতে চান, তুমি নিজে দেখেছ? কুরায়েব বললেন যে না, অন্যরা দেখেছেন এবং মুয়াবিয়াও রোজা রেখেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বললেন আমরা চাঁদ দেখেছি শনিবার। তোমার কথায় আমরা রোজা ভাঙবো না। আমরা ৩০টি রোজাই রাখবো। কুরায়েব বললেন, মুয়াবিয়া তো খলিফাতুল মুসলিমিন তিনি যেভাবে রোজা রাখলেন সেভাবে কি হবে না? আব্বাস (রা.) বললেন যে না, হবে না। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেন, না; এটাই আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আদেশ দিয়েছেন যে আমরা আপন দেশের লোকের চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করব; অন্যান্য দূর দেশবাসীদের চাঁদ দেখাকে আমরা যথেষ্ট মান্য করব না।  অর্থাৎ সিরিয়া আর মদিনায় একসাথে রোজা রাখা হচ্ছে না।  

আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (রমযানের) চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোযা রাখবে না এবং (শাওয়ালের) চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোযা রাখা বন্ধ করবে না।-সহীহ মুসলিম /৩৪৭ অন্য হাদীসে আছে, ‘(শাবানের ২৯ দিন পূর্ণ করার পর) তোমরা যদি রমযানের চাঁদ না দেখ তাহলে শাবান মাস ৩০ দিন পূর্ণ করবে।

আয়েশা (রা) বলেন,মুহাম্মাদ (সা) শাবানের মাসের দিন গণনার ক্ষেত্রে অতিশয় সাবধানতা অবলম্বন করতেন এবং তিনি যখনই নতুন চাঁদ দেখতে পেতেন তখন রোযা শুরু করতেন। আর যদি নতুন চাঁদ না দেখতে পেতেন তাহলে শাবান মাসের ত্রিশ দিন পূর্ণ করে রোযা রাখতেন
[
আবু দাউদ, হাদীস নং ২৩১৮]  

উপরোক্ত হাদীস গুলো থেকে আলেমগণ মনে করেন, ভৌগোলিক সীমারেখা আর চাঁদ দেখা এই দুইটি বিধান মেনে রোজা ঈদ পালন করতে হবে  অর্থাৎ সিরিয়া মদিনাই  দুইজন শাসক ছিলেন , তারা যখন তাদের ভূখণ্ডে চাঁদ দেখলো তখন রোজা রাখলো তাদের দেশের মানুষদের  নিয়ে আর যদি একই শাসকের অধীনে সিরিয়া এবং মদিনা পরিচালিত হতো তাহলে একই দিনে এবং তারিখে রোজা রাখা হতো  তার মানে  স্ব  স্ব  অঞ্চলের শাসক ঘোষণা দিবেন তার অঞ্চলের মানুষদের রোজা শুরু করার ওই অঞ্চলে চাঁদ দেখে এবং তার খবর তখন মানুষের কাছে পৌঁছাতে গাঁদা ঘোড়ার বাহনের মাদ্যমে  অর্থাৎ চাঁদ নিজে না দেখেও একজন মুসলিম  রোজা রাখতে পারেন চাদ উঠার  খবর শুনে 

উল্লেখিত হাদীস কারীমা অনুযায়ী রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম কি নিজে চাঁদ দেখে রোযা রেখেছেন, ঈদ করেছেন? না কি অন্যের দেখার সংবাদের মাধ্যমেও রোযা রেখেছেন, ঈদ করেছেন? প্রসংগে মুহাম্মদ (সাঃ)এর নিজের আমল থেকে পবিত্র হাদীসে যে প্রমাণ পাওয়া যায় তা হচ্ছে-
# আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন কিছু সংখ্যক মানুষ (রমযানের) নুতন চাঁদ দেখল। আমি রসূলুল্লাহ (সা)কে সংবাদ দিলাম যে আমিও উক্ত চাঁদ দেখেছি। ফলে রসূলুল্লাহ (সা) নিজে রোযা রাখলেন এবং মানুষকেও রোযা রাখতে নির্দেশ দিলেন। ---- (আবু দাউদ, দারেমী)- মিশকাত, পৃঃ-১৭৪ ,

  # আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: একজন মরুচারী মহানবী (সা)এর নিকট আসলো এবং বললো, আমি প্রথম চাঁদ অর্থাৎ রমযানের চাঁদ দেখেছি। তখন রসূলুল্লাহ (সা) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কিআল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেইএকথা সাক্ষ্য দান কর? সে বলল হ্যাঁ, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম আল্লাহর রসূলতুমি কি একথা সাক্ষ্য দান কর? সে বলল হ্যাঁ, রসূলুল্লাহ (সা) বললেন, হে বেলাল মানুষের কাছে ঘোষণা করে দাও তারা যেন আগামী দিন রোযা রাখে। ----- (আবু দাউদ পৃঃ-৩২০, তিরমিযী পৃঃ-১৪৮, নাসায়ী-২৩১, ইবনু মাজাহ পৃঃ-১১৯, মিশকাত পৃঃ-১৭৪)

# হযরত আবু উমাইর ইবনু আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত যে রসূলুল্লাহ (সা)এর নিকট একদল আরোহী আসল এবং তারা সাক্ষ্য দিল যে তারা গতকাল (শাওয়ালের) চাঁদ দেখেছে। ফলে রসূলুল্লাহ (সা) মানুষকে রোযা ছাড়ার আদেশ দিলেন। পরের দিন প্রাতঃকালে সকলেই ঈদগাহে সমবেত হলেন। -----(আবু দাউদ, নাসায়ী)- মিশকাত-১২৭

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (রমযানের) চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোযা রাখবে না এবং (শাওয়ালের) চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোযা রাখা বন্ধ করবে না।-সহীহ মুসলিম  অর্থাৎখবর সকলের কাছে পৌঁছানো , চাঁদ উঠা এই দুটো বিসয়ের  উপর রোজা রাখা ছাড়া নির্ভর করছে হাদীস অনুযায়ী বরং ভূখন্ত বা দেশ কোনো বিবেচ্য বিষয়  না  অতএব, যদি আরবের কোথাও চাঁদ দেখা যায়, তাহলে সে সংবাদ ভিন্ন এলাকায় পৌঁছে গেলেচাঁদ দেখা গেছেব্যাপারটি উক্ত এলাকার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। আবার ভিন্ন এলাকাতে চাঁদ দেখা গেলে সে সংবাদ আরবে পৌঁছলে, আরবের জন্যও এটি গ্রহনযোগ্য হবে এভাবে সকল স্থানের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি একই  

    আরেকটি হাদীস  যা থেকে  সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, হাদিসটি হলঃ দিন রোযা আরম্ভ হবে যেদিন সকলে রোযা রাখবে, রোযা ভাঙ্গতে হবে দিন যেদিন সবাই রোযা ভাঙ্গে আর কুরবানি করতে হবে দিন যে দিন সকলে কুরবানী করে  [তিরমিযী, হাদীস নং ৬৯৭]

-সহীহ বুখারী /২১২ মাসআলা : কোনো ব্যক্তি একাকী চাঁদ দেখেছে, কিন্তু তার সাক্ষ্য গৃহিত হয়নি, এক্ষেত্রে তার জন্য ব্যক্তিগতভাবে রোযা রাখা জরুরি নয়। এক ব্যক্তি হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা.-এর নিকট এসে বলল, ‘আমি রযমানের চাঁদ দেখেছি।উমর রা. জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার সাথে অন্য কেউ কি দেখেছে?’ লোকটি বলল, ‘না, আমি একাই দেখেছি।উমর রা. বললেন, ‘তুমি এখন কী করবে?’ লোকটি বলল, ‘(আমি একা রোযা রাখব না) সবাই যখন রোযা রাখবে আমিও তখন রোযা রাখব।উমর রা. তাকে বাহবা দিয়ে বললেন, ‘তুমি তো বড় ফিকহ প্রজ্ঞার অধিকারী।’-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক /১৬৮;     


অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সকলকে একত্রে , দলবদ্ধ ভাবে  রোজা রাখা ছাড়ার নির্দেশ প্রদান করেছেন উপরোক্ত হাদীস গুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যাচ্ছে , রোজা রাখা ছাড়ার বিধান হচ্ছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তির চাঁদ দেখা , খবর সকলের কাছে পৌঁছে দেয়া এবং দলবদ্ধ ভাবে রোজা পালন করা  অর্থাৎ সকল কাছে পৌঁছা  মানে সকল মুসলিম  বসবাকারী অঞ্চলের মধ্যে যতদূর সম্ভব পৌঁছানো  যায় / কারণ   মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখো এবং চাঁদ দেখে ছাড় তবে যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে, তাহলে মাসের হিসাব ৩০ দিনে পূর্ণ করে নাও।(বুখারি, হাদিস : ১৮১০)   থেকে স্পষ্টত ,  এই নির্দেশ কোন অঞ্চলের শাসক তার অধিবাসীদের জন্য নয় বরং সমগ্র মুসলিম বিশের সমগ্র মুসলিমদের  জন্য 

দেশ ব্যাপারটি হলো একটি আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সীমারেখা,যার উপর ভিত্তি করে একটি এলাকাকে নিজেদের বলে আখ্যায়িত করা হয়। মূলতঃ পৃথিবী আল্লাহর এবং তা সকল মানুষের জন্যে উম্মুক্ত। হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) সারা পৃথিবীর সকল মানুষের জন্যে রসূল। তিনি নির্দিষ্ট কোনো গোত্র, সম্প্রদায়ের জন্যে নির্ধারিত নন। আর তাই তাঁর(সাঃ) সকল বক্তব্য পৃথিবীর সকল মানুষের জন্যে সমভাবে প্রযোজ্য। অতএব, চাঁদ দেখা সংক্রান্ত বিষয়টি সারা পৃথিবীর সকল মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কোনো এলাকার লোক চাঁদ দেখতে ব্যর্থ হলে, ভিন্ন এলাকার মানুষের সাক্ষ্য গ্রহন করা হয়েছে এবং এখানে সেই লোকটি কত দূরবর্তী স্থানের লোক তা বিবেচনায় আনা হয়নি। এখানে আরেকটি বাস্তবতা হলো যোগাযোগের মাধ্যম। তৎকালীন সময়ে মানুষের বাহন ছিল ঘোড়া, গাধা, উট, পদযুগল ইত্যাদী।   আজকের দিনের মত যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে রেডিও, টেলিভিশন, ইন্টারনেট, টেলিফোন না থাকাতে তাদের পক্ষে দূরবর্তী অঞ্চলের মানুষের সাথে তাৎক্ষনিক যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব ছিল না। ফলে, সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা গেলে প্রথমে তা নিজ এলাকার লোকদেরকে জানিয়ে দেওয়া হত, তারপর পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষদেরকে জানানোর জন্যে ঘোড়া সওয়ার পাঠানো হত।  কিন্তু ঘোড়া সওয়ারের পক্ষেও বহুদূর গমন করা সম্ভবপর ছিলনা।

 কিন্তু আমরা এখান থেকে একটি বিষয় বুঝতে পারি, তা হলো-কোনো এলাকায় চাঁদ দেখা গেলে যথাযথ গুরুত্বের সাথে অন্য এলাকার মানুষকে জানানো জরুরী, যাতে করে সকলে একসাথে রোজা ,ঈদ পালন করতে পারে।

এখন ধরা  যাক , ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানরা ঈদ রোজা রাখেন এই অঞ্চলের চাঁদ  দেখা নিয়ে সারা পৃথিবীতে একই সময়ে চাঁদ  দেখা যায় না ভোগলিক কারণ আকাশ  মেঘাচ্ছন্ন থাকার করণে   বাংলাদেশ , ভারত, নেপাল  পাকিস্তান আলাদা দেশ  বাংলাদেশে চাদ দেখা গেলো ঈদ ঘোষণা হলো একদিন  কিন্তু ভারতে আকাশ মেঘছন্ন  থাকার কারণে দেখতে পেলো না / তাই ভারত ঈদ  ঘোষণা দিলো  পরেদিন  অথচ ভারত  সরকার টিভি , ইন্টারনেট ইত্যাদি মাধ্যমে  ঠিকই  জানতে পারলো চাঁদ উঠার খবর কিন্তু দুই দেশ হওয়াতে ঈদ ঘোষণা করতে পারতেছে না  আলেমদের হাদীস এর ব্যাখ্যা অনুযায়ী    আবার ভারত এবং বাংলাদেশ এক রাষ্ট্র  হলে এর যেকোনো এক  স্থানে কয়েজন মানুষ চাঁদ দেখলে রোজা রাখা ঈদ করা যাচ্ছে - আলেমদের বর্তমান ব্যাখ্যা অনুযাযী (স্ব স্ব দেশের মানুষের চাঁদ দেখার বাধ্যবাধকতা )

আবার ধরা যাক, ভারত ভেঙে আরো তিনটি দেশ হল কাশ্মীর, হায়দারাবাদ ভারত এখন  হায়দারাবাদ দেশের কয়কজন মানুষ চাঁদ দেখলো তা কাশ্মীর দেশে বা ভারতে চলবে না কারণ তাদের দেশের মানুষ চাঁদ দেখে নাই বা পরদিন দেখলো  তারমানে এই ভারতেই রোজা ঈদ পালিত হবে ভিন্ন দিন যদি আলাদা রাষ্ট্র হয় আর চাদ না  দেখা আলাদাভাবে  আলাদাভাবে। কিন্তু ইসলাম তো কোনো রাষ্টের আলাদা দেশ গঠনের উপর আলাদা নিয়ম -এইভাবে চলে না।  অর্থাৎ ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, একসাথে দেশ হলে এই ভারতীয় উপমহাদের মুসলিমরা একই দিনে ঈদ রাজা পালন করতে পারবে চট্টগামের কযেকজন মানুষের চাঁদ দেখার দ্বারা, পাকিস্তান , কাশ্মীর ভূখণ্ডে আলাদাভাবে চাঁদ  উঠার দরকার নাই কিন্তু আলাদা দেশ হলে পারবে না - চাদ আলাদা আলাদা  উঠতে হবে  এইটাই হলো বর্তমান আলেমদের ব্যাখ্যা  বাংলাদেশ যদি দুই ভাগ হয় তাহলেও দুইভাগের মানুষকেও আলাদা আলাদা চাঁদ দেখে রোজা রাখতে হবে  অথচ খবর জানা যাচ্ছে সকল ভুখণ্ডে কিন্তু শুধু দেশ আলাদা হলেই এই অঞ্চলে কোনো কারণে একদেশে  চাঁদ দেখা না গেলেই রোজা ঈদ এক সাথে করা যাচ্ছে না

ইসলাম পালনের ধরন পরিবর্তন হবে রাজনৈতিক বা কোনো কারণে দেশ আলাদা আলাদা হওয়ার উপর আমি অন্তত একমত হতে চাচ্ছি  না যদিও আমি কোনো ইসলামিক বিশেষজ্ঞ নই তবে প্রত্যেক মুসলমান ইসলামিক বিতর্কিত বিষয়গুলোতে   নিজস্ব   সুচিন্তিত ব্যাখ্যা মতামত আলেমদের কাছে তুলে ধরতে পারেন , আলেমরাই ইসলামিক মাসালা , বিধিবিধান ব্যাখ্যা দিবেন কুরআন সুন্নার আলোকে  এটাই আবশ্যক। 

আমি মনে করি, ৫৭টি মুসলিম দেশ এবং সকল মুসলিমের প্রতিনিধিত্বকারী বিশ্ব মুসলিম সংগঠন , আই, সি-এর ফিকহ একাডেমী যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে , সমগ্র মুসলিম বিশ্বে সকল মুসলিম একই তারিখে রোজা রাখবে ঈদ পালন  করবে।  এটাই অধিক গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা নিয়ম   স্ব স্ব দেশের চাঁদ দেখা কমিটির মতো আন্তর্জাতিক চাঁদ দেখা কমিটি করা হবে। এবং পৃথিবীর যে কোনো স্থানে রমজান মাসের নতুন চাঁদ দেখা যাবে , এই কমিটির প্রধান ঘোষণা দিবেন সারা বিশের মুসলমানদের একই তারিখে রোজা রাখার ঈদ পালন করার জন্য উপরোক্ত হাদীস গুলো পর্যালোচনা করলে এটাই অধিক  যুক্তিসঙ্গত  বলে মনে হয়।   বর্তমান যুগে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক উন্নত , এক দেশ থেকে অন্য দেশের খবর মুহূতের মধ্যেই    পাওয়া যায়     আমরা জানি ইসলামের বিধি বিধান বা কুরআন  পরিবর্তন হবে না কিন্তু ইসলামী বিধান পালনের মাসালা বা নিয়ম সুচিন্তিত ইসলামিক আলেমগণ ধারা যুগের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে পরিচালিত হবে।    কাবা ঘর মক্কা , সেক্ষেত্রে চাইলে মক্কা , মদিনা  শহরের  যেই তারিখে বা দিনে চাঁদ উঠে সারা বিশ্বে তাদের সাথে মিল রেখে রোজা ঈদ পালন করা যেতে পারে যদিও  অনেক মুসলিম দেশ তা করছে।    আমরা সকল দেশ একই তারিখে বা দিনে ঈদ করতে পারি তবে স্ব  স্ব দেশের  ভিন্ন ভিন্ন সময়ে রোজা ছাড়া হবে এবং ঈদ নামাজ অনুষ্ঠিত হবে।  যেমন বাংলাদেশে ঈদ জামাত সকালে হলে লন্ডনে হবে বাংলাদেশ সময় বিকালে কিন্তু একই তারিখে  হবে। 

এই বিষয়ে : শমসের আলী বলেছেন, একজন চাঁদ দেখলেই সমগ্র মুসলমান এর চাঁদ দেখা হয়ে গেলো।  চাঁদ  দেখার খবরটা শুধু আগে ঘোড়ার বাদ্যমে প্রচার করতো এখন রেডিও টেলিভিশন করবে। 

  সুতরাং আমাদের সম্মানিত প্রাজ্ঞ আলেমগণদের একত্রে বসে ওআইসি ফিকহ একাডেমির এই সিদ্দান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে কুরআন হাদীসরে  উপযুগতটা পালন এবং সমগ্র মুসলিম বিশের ভাতৃত্ব ঐক্যের স্বার্থে।  অতএব  , সমগ্র বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বের সকল মুসলমান একই তারিখে ঈদ পালন করবে আর এতেই মুসলিম উম্মার মান মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে এবং কুরআন হাদীসের পবিত্রতা রক্ষা  পাবে।  

     
(“ভুল ত্রুটি আল্লাহ তাআলার ক্ষমা করুক’’)