Sunday, 29 September 2019

"বাংলাদেশের সংবিধানের ধর্ম নিরপেক্ষতা ও ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক নিষেধাক্কা'' ?

THE RIGHT THINKING 24


"বাংলাদেশের সংবিধানের ধর্ম নিরপেক্ষতা (উত্তম শব্দ ধর্মীয় স্বাধীনতা, সকলের বা স্ব ধর্মীয় স্বাধীনতা )রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক নিষেধাক্কা'' ?

ধর্মনিরপেক্ষতা অক্সফোর্ড শব্দকোষ অনুসারে রাষ্ট্রে সমাজের জন্য কোন আইন বা নিয়ম নীতি প্রনয়ের ক্ষেত্রে ধর্মীয় বিধি বিধানের কোনো প্রভাব থাকবে না অর্থাৎ ধর্মীয় বিধি বিধান কোনো বাঁধা প্রধান বা অন্তরায় হবে না, রাষ্ট্র ধর্মীয় বিধানের বিরুদ্ধে যায় এমন নিয়ম নীতি আইনকানুন তৈরী বা প্রণয়ন করতে পারবে, এবং ধর্ম রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বা কার্যকলাপ থেকে দূরে বা আলাদা থাকবে এবং থাকা উচিত, অবশ্যই থাকতে হবে এমনটা নয়, ''secularism means religion should not be involved in society or state institutions, religion is separated from state institutions'', ''here it is used should instead of must'' অর্থাৎ রাষ্ট্রের ধর্ম নিরপেক্ষতা মানে নাস্তিকতা নয় , একেবারে ধর্ম বিরোধিতা নয় ; সোজা ভাষায় এটা হলো এমন ধর্মের পক্ষেও থাকা যাবে আবার চাইলে বিপক্ষেও থাকা যাবে -এটাই ধর্মীয় স্বাধীনতা রাষ্ট্রীয় ও সমাজ ব্যাবস্থায়, ব্যাক্তিজীবনে ধর্ম চর্চা করতে পারবে স্বাধীনভাবে।   এটাই পশ্চিমা দেশের সেক্যুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতা। তবে বাস্তবতা ভিন্ন, সমাজের নাগরিকগণ ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে ধর্মের ব্যাবহার হয়ে থাকে, আমেরিকার , যুক্তরাজ্যের এমপি প্রধানমন্ত্রী ধর্মীয় বই নিয়ে ধর্ম ও সৃষ্টিকর্তার নামে শপথ নেয়। তাঁরা ধর্মনিরপেক্ষতা মূলনীতি রাষ্ট্রের একটি উপাদান ধর্মীয় বিধান লঙ্ঘন বা বিরোধিতা বা অনুপস্থিতিই  শুধু পুরোপুরি মেনে চলছে না, আরেকটি উপাদান ধর্মীয় বিধানের  উপস্থিতি সেটিও মেনে চলছে  সামাজিক বিস্বাস এর জন্য, সামাজিক বিস্বাস ও ধর্মীয় বিস্বাস এক হওয়ায় । তবে আইন প্রণয়ের  ধর্মের শিথিল ব্যাবহার করে মাত্র কারন মানুষ বা সমাজ ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত। আর বেশিরভাগ মানুষের প্রতিফলনই গণত্রান্তিকভাবে আইনে প্রতিফলনর চেষ্টা করে। তাই রাষ্ট্র এখনো ধর্ম নিরপেক্ষ হয় নাই শুধু মাত্র ধর্মের শিথিল প্রয়োগ হয় সমাজের মানুষের ধর্ম চর্চার কারণে। সমাজের মেজরিটি যেদিন নাস্তিক হবে তখন কেবল ধর্ম বিরোধী  নীতি বা ধর্মনিরপেক্ষতা প্রযোগ হবে। ইতিহাস থেকে দেখা যায়, সেক্যুলারিজম চালু করা হয়েছিল ধর্মীয় বা ধর্মের নামে অত্যাচার ভয়াবহতা থেকে বাঁচার জন্য , একসময় খ্রিস্টান চার্চ রাষ্ট্র পরিচাললনা করতো ধর্মীয় বিধি বিধানের ,তখন ব্যাপক নির্যাতন চলতো মানুষের ওপর নিয়ম ভঙ্গের জন্য। একসময় ক্যাথলিক প্রটেষ্টান দুই দলের খ্রিষ্টানরা মারামারি করে  শত শত মানুষ আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে ধর্মের নামে। তারপর রাষ্ট্র থেকে ধর্ম ব্যাক্তিগত জীবনে রাখার চর্চা শুরুর চিন্তা থেকে এই সেক্যুলারিজম আবিষ্কার হয় যা মৌলবাদী বা উগ্রবাদী ধর্মীয় সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সোজা ভাষায় ধর্মের চর্চা কিছুটা কমানোর জন্য, শিথিল বা স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য এবং তাঁর সুফল পশ্চিমা দেশসমূহ পেয়েছে সেখানে ধর্মের বিধান চর্চার জন্য বা  না পালনের জন্য বা লঙ্গনের জন্য  এখন আর হত্যাকান্ড হয় না।     

অর্থাৎ তারা এটাকে বাঁচার অস্র হিসেবে ব্যাবহার করে যেমন কেউ ধর্মীয় বিধান লঙ্ঘন করলো আগে তাকে হত্যা করা হতো, এখন সে নিরাপত্তা বা পতিরক্ষা পায় সেকুলারিজমের অধীনে যে রাষ্ট্র ধর্ম নিরপেক্ষ তাকে এর জন্য কোনো মাশুল দিতে হবে না , সে কোনো অপরাধ করে নাই যদিও অনৈতিক কাজ করেছে ধর্মীয় বিধান লঙ্ঘন করে কারণ আইন প্রণীত হবে সামাজিক মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে, ধর্মীয় মূল্যবোধের ভিত্তি করে নয়।  আর এর জন্য তার স্বাভাবিক রাষ্ট্রীয় কাজকর্মে অংশ নিতে অসুবিধা নেই বা রাষ্ট্র কোনো বৈষম্যমূলক আচরণ করে না। 

বাংলাদেশের ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা উচিত না , কিন্তু তার অপপ্রয়োগ করতে দেয়া যাবে না সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ অনুসারে ।  সংগঠন ধর্ম চর্চা করে, ধর্মের চর্চা করে না বলেও বাতিল করাও যাবে না; অর্থাৎ দেশের জন্য, নাগরিকের জন্য ক্ষতিকর হলে বাতিল করা যাবে যে কেউকেই ধর্মের চর্চাকারী বা বিধর্মী বা নাস্তিক কোনো দল  বা সংগঠনকে সেক্যুলার রাষ্ট্রের অধীনে আইন করে সংবিধানের ৮ (১,২) অনুচ্ছেদ অনুসারে, এতে বলা আছে ''জাতীয়তাবাদ , সমাজতন্ত্র , গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা'' মূলনীতির আলোকে আইন প্রণয়ন ও ব্যাখ্যা প্রদান করতে হবে, সামাজিক বিশ্বাস যদি ধর্মীয় হয় তাহলে ধর্মীয় বিশ্বাসীই সামাজিক বিস্বাস ও মূল্যবোধ ।  তবে  সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ অনুসারে নীতি নৈতিকতার বিরুদ্ধে হলেও আবার বাতিল করা যাবে, নীতি নৈতিকতার মানদন্ড কি তা পরিষ্কার নয় একেক মানুষের একেক রকম নীতি নৈতিকতা।  যেমন কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল যদি বলে আমাদের ভোট দেন ক্ষমতায় গেলে আমরা শরিয়া আইনে দেশ পরিচালনা করবো। এটা সংবিধানের প্রধান মূলনীতির লঙ্গন । বাংলাদেশে মানুষ চাইলে  শরিয়া আইনে দেশ পরিচালনার ধর্মীয় বিধি বিধান মেনে চলতে পারে , বাধা নেই সংবিধানে সেক্যুলারিজমের সংজ্ঞানুসারে, আবার মানুষ না চাইলে ধর্মীয় বিধি বিধান তা বাতিলও করতে পারবে রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা থেকে আইন করে, তবে ব্যাক্তিজীবনে ধর্ম চর্চা করতে পারবে স্বাধীনভাবে। মানুষের গনত্রান্তিক ইচ্ছানুসারে আইন প্রণীত হবে, কোনো ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী নয়। আবার  সেক্যুলার রাষ্ট্রে ধর্ম বিরুধী আইন করতে বাধ্য নয়, চাইলে ধর্মের পক্ষেও আইন বা ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী আইন করা যাবে, তবে আইন প্রণয়নে ধর্মীয় বিধান আর সামাজিক মূল্যবোধ দু এর মধ্যে দ্বন্দ হলে  সামাজিক মূল্যবোধ প্রাধান্য  পাবে। আবার কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল যদি বলে আমরা ধর্মীয় বিধি বিধান ধারা উজ্জীবিত হয়ে সকল কর্ম ও রাষ্ট্র পরিচালনা করবো ধর্মের মতো ন্যায় সঙ্গতভাবে , আমাদের ভোট দেন , এটা বাংলাদেশের সংবিধান সম্মত। সংবিধানের মূলনীতি মেনে নিবন্ধন পেতে হবে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলকে।

 সংবিধানে অনুচ্ছেদ ২ক : বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম মানে এই নয় যে ক্ষমতায় গিয়ে বাংলাদেশে ইসলামী গতানুগতিক শরিয়া আইন চালু করবো। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম মানে হলো বাংলাদেশের সংখ্যা গরিষ্টের বেশি মানুষ প্রায় ৯০% ইসলাম ধর্মের অনুসারী , তারা তাদের ব্যাক্তিগত জীবনে ইসলাম ধর্ম চর্চা করবে আর রাষ্ট্র তা বাস্তবায়ন করবে, কোনো ধরণের বাধা সৃষ্টি করবে না, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকাই রাষ্ট্রর ইসলাম ধর্ম প্রচার প্রসারে কাজ করা, অর্থ ব্যয় করা, একটি আনুষ্ঠানিক বা অফিসিয়াল দায়িত্ব মাত্র বা এক্ষেত্রে বেশি প্রাধান্য দিবে । অর্থাৎ বাংলাদেশের নাগরিকগন ব্যাক্তিগত জীবনে ইসলাম ধর্ম চর্চার স্বাধীনতা ভোগ করবে। আবার ইসলাম ধর্মের মূলনীতি হলো অন্য কোনো ধর্মের চর্চায় ও এমনকি শত্রুর ধর্ম চর্চায় বাধা দিবে না বরং নিরাপত্তা দিবে, শত্রু বলতে কারাগারে বন্দি অমুসলিমরাও তাঁরা তাদের ধর্ম চর্চা করবে। যেমন সৌদি আরবেও ইহুদি খ্রিস্টানদের তার ধর্ম চর্চায়, পালনে বাধা দেয়া যাবে না , ইসলামের এমনটাই নির্দেশ । আবার সংবিধানুসারে অন্যান্য ধর্ম সমূহ হিন্দু , বৌদ্দ , খ্রিস্টান , ইহুদি , শিখ , আহমদিয়া , জৈন, উপজাতীয় ধর্ম ইত্যাদি সমান সুবিধা ভোগ করবে ও স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করবে। অনুচ্ছেদ ১৯ (১), ২০ (১), ২৭, ২৮ সকল নাগরিক সমান অর্থাৎ নাস্তিকও সমান অধিকার ও মর্যাদার নাগরিক এবং সে যেকোনো কর্মে অংশ নিতে পারবে এবং তার কর্ম অনুসারে তার পারিশমীক মর্যাদা নির্ধারিত হইবে। যে কেউ যেকোনো ধর্ম গ্রহণ ও ত্যাগ করতে পারবে ও প্রচার করতে পারবে তার ধর্মীয় স্বাধীনতায়। 

 আবার কেউ বা কোনো নিবন্ধিত সংগঠন বা নিবন্ধিত রাজনৈতিক সংগঠন ধর্মের কথা বলে সভা সমাবেশ করতে পারে কারণ স্বাধীন আইনসম্মত যৌক্তিক সভা সমাবেশের, প্রচার প্রচারণার অধিকার সংবিধানে সংরক্ষণ করা আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি কোন ধর্মের যেমন ইসলাম বা খৃস্টান ধর্মের ছাত্ররা সিদ্ধান্ত নেয় তারা সকল খৃস্টান ছাত্র মিলে একটা সংগঠন করবে এবং বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলবো সরকার দেশ রাজনীতি ইত্যাদি, এটা সংবিধান সম্মত সামাজিক মূল্যবোধের অধীনে , এটা তাদের সাংবিধানিক অধিকার , নিষিদ্ধ করার সুযোগ নাই। এটা রাজনৈতিক চর্চা। বিভিন্ন মতের রাজনৌতিক চর্চার মানেই গণতন্ত্র। শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কাজ করাই রাজনৈতিক চর্চা না , বিভিন্নভাবে রাজনৈতিক চর্চা হতে পারে।

যেমন সকল মুসলমান বা খ্রিষ্টান ব্যাক্তি দ্বারা গঠিত রাজনৈতিক দল যদি বাংলাদেশের সংবিধান মেনে ক্ষমতায় যেয়ে দেশ পরিচানা করবে সংবিধানের মূলনীতির আলোকে এতে কোনো আইনগত বাধা নেই।

দেশের সংবিধানের মূলনীতি শুধু সংসদ সদস্যদের ভোটে  পরিবর্তন না হয়ে , জনগন ,সংসদ সদস্য ও বিভিন্ন শেণীপেশার মানুষের ঐক্যমতের ভিত্তিতে হওয়া প্রয়োজন। একক বিষয়ে রেফারেন্ডাম বা গণভোট এর মাধ্যমে পরিবর্তন করা উচিত। সাধারণ নির্বাচনের কোনো মেনোফেস্টের মধ্যে ঢুকিয়ে সংবিধানের মূলনীতি ও গুরুত্বপূর্ণ বিধান পরিবর্তন করা উচিত নয়। যেমন ভারতের বর্তমান সংসদ চাইলেই সংখ্যাগরিষ্ঠের দ্বারা সংবিধান পরিবর্তনের মাধ্যমে হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না, তা হবে অসাংবিধানিক। কিন্তু শুধু এই বিষয়ে যদি গণভোট দিয়ে জনগণের রায় পক্ষে পায় তাহলে করতে পারে এবং তা সংবিধানসম্মতও হবে তবে কেনো সংবিধানের গ্রম নরম বা প্রতিষ্ঠা মূলনীতি  করে পরিবর্তন করে নতুন নিয়ম আনছে তাঁর যথাযথ কারণ দশাতে হবে। কারণ সেক্যুলারিজম একটি প্রতিষ্ঠ উপাদান আধুনিক গনত্রান্তিক রাষ্ট্রের যেখানে নানা ধর্মের নানা মতের মানুষজন একত্রে  বাস করে, একটি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য।  যেহেতু ভারত সেক্যুলারিজম দ্বারা সকল ধর্মের মানুষের স্বাধীনতা  সহবস্থান নিচ্ছিত করেছে , তাই এটা বাতিলের তেমন সুযোগ নেই কারণ বাতিলের জন্য কোনো যথার্থ কারণ নেই। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হলে যেকোনো রাষ্ট্রে সমস্যা নেই কারণ ইসলাম ধর্ম সকল ধর্মের মানুষের স্বাধীন ধর্ম চর্চায় বাধা দেয় না বরং স্বাধীনতা দেয় আর ভারতবর্ষ হাজার হাজার বছরের মূলত মুসলমান শাসনত্রান্তের ভুখন্ড।  তাই মুসলমান সংকৃতি এবং ধর্মের স্বাধীনতা বহাল রেখেই ভারতবর্ষকে এগিয়ে নিতে হবে। আবার সনাতন ধর্ম অনেক পুরোনো তাই এর নিয়মকানুন মানবজাতির সর্বশেষ ধর্মীয় বিধান নিয়মাবলী ইসলামের সাথে কম মিল। ইসলাম চর্চা করলে সকলের জন্য উত্তম। অর্থাৎ ভারতের বর্তমান সংসদ চাইলেই সংখ্যাগরিষ্ঠের দ্বারা সংবিধান পরিবর্তনের মাধ্যমে হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না, তা হবে অসাংবিধানিক এবং গনত্রন্তের নিয়মের সাথে সাঙ্গরসিক। ভারত একটি মুসলমান রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হলেও মুসলমান রাষ্ট্রসমূহে সুসম্পর্ক ও ব্যাবসা বাণিজ্যেও অনেক সুবিধা হবে। 

অন্যদিকে উদাহরণস্বরূপ মুসলমান বা হিন্দু ইত্যাদি ধর্মের ক্ষেত্রে সম্পত্তি ভাগ করার ক্ষেত্রে ধর্মের নিয়ম অনুসারে রাস্ট্র আইন করতে বাধ্য নহে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম ২ক এই অনুচ্ছেদের  অধীনে কারণ ধর্ম পালনে সম মর্যাদা ও স্বাধীনতা ভোগ করিবে এবং রাষ্ট্র তা নিশ্চিত করিবে কিন্তু আইন প্রণয়ন করিতে হইবে সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ  মূলনীতির অধীনে। এখানে ধর্ম বিধান পালনের স্বাধীনতা প্রদান ও রাষ্ট্রীয় বা সমাজের জন্য আইন প্রণয়ন ভিন্ন বিষয়। অনুচ্ছেদ  ৮ (১,২) অনুসারে রাষ্ট্র চাইলে নাগরিকের ধর্মীয় বিধান বহাল রেখে কিংবা বহাল  না রেখেও আইন প্রণয়ন করতে পারবে সেক্যুলারিজমের অধীনে। কোনো নাগরিক তাঁর  পরিবর্তিত ধর্মীয় বিধান মেনে চলতে চায় ব্যাক্তি জীবনের ধর্ম চর্চায় রাষ্ট্রকে  তা সুযোগ করে দিতে হবে বা বাস্তবায়িত করতে হবে, কেউ বাধা প্রদান করতে পারবে না, অর্থাৎ ধর্মীয় স্বাধীনতা অনুচ্ছেদ ৪১ (১) আইন, জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতা সাপেক্ষে হবে, ছেলে মেয়ে সমান সম্পত্তি পাবে, মেয়ে তালাক অধিকার, মুতা বিবাহ   ইত্যাদি ধর্মীয় বিধান আইন করে পরিবর্তন বা মডারেট করা যাবে।   যেমন পর্যটনে মদ, জুয়া বৃদ্ধি করে বা বাতিল করে  আইন প্রণয়ের সুযোগ আছে। বাতিল করতে চাইলে তা হবে সামাজিক মূল্যবোধের অধীনে ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অধীনে। কেউ  (Riba-interest) সুদ অর্থনীতি বাতিল চাই বলে ২ক অনুসারে আদালতে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না। 

সংবিধানের মূলনীতি রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম বা অন্য কোনো ধর্ম নয় বরং ধর্মনিরপক্ষতা, আর আইন প্রণয়নে ও  ব্যাখ্যা প্রদানে সেক্যুলারিজম প্রাধান্য পাবে, তাই রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম বা এর সমান মর্যাদার আরো অনেক ধর্ম হিন্দু বৌদ্দ ইত্যাদি আইন প্রণয়নে অকার্যকর হবে তবে ব্যাক্তিগত জীবনে ধর্ম পালনের স্বাধীনতা ভোগ করবে।  

আবার যদি শুধু রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকে তাঁর মানে এই নয় যে রাস্ট্র শরিয়া আইনে চালাতে হবে। এটা থাকা মানে রাস্ট্র চাইলে ইসলামী বিধান অনুসারে আইন করতে পারবে আবার অশরিয়া আইন বা সাধারণ আধুনিক আইনও করতে পারবে। রাষ্ট্রধর্ম থাকা মানে রাষ্ট্রটি তাত্বিকভাবে ধর্মনিৰপেক্ষ নয়, কোনো বিশেষ ধর্মের জনগোষ্ঠীকে পরিচিত করে, প্রাধান্য দেয় বা ওইটা বেশিরভাগ জনগোষ্ঠীর ধর্ম ওই রাষ্ট্রে। তবে রাষ্ট্র ধর্ম থাকলে এটাই সুবিধা বিশেষ ধর্মের মূল্যবোধ রাষ্ট্র কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় বিবেচনার চেষ্টা করবে, করতেই হবে বাধ্যবাধকতা নেই । আবার যদি সংবিধানে বলা থাকে রাষ্ট্রীয় সকল কাজে বা আইন প্রণয়নে রাষ্ট্রীয় ধর্ম প্রধান্য পাবে বা বিবেচনায় নিতে হবে তখন ধর্ম অনুযায়ী আইন করতে হবে। যার ফলে রাষ্ট্রধর্ম থাকা বা না থাকা কোনো বিশেষ তাৎপর্য বহন করে না, আইন প্রণয়নে বা রাষ্ট্রীয় কোনো সিদ্বান্তে। এটা শুধু একটা রাষ্টের জনগোষ্ঠীর বা রাষ্টের পরিচয় মাত্র। আবার শুধু ধর্ম নিরেপেক্ষ থাকলেই ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী আইন করা যাবে না , এমনটাও নয়। যেমন সৌদি আরব যদি বলে দেশ ইসলামী শরিয়া আইন অনুযায়ী চলবে আর রাষ্ট্রধর্ম হিন্দু বা খ্রিস্টান এতে তাঁদের হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী আইন করতে হবে না, ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী আইন করতে হবে। আইন প্রণীত হবে সংবিধানে কি বলা আছে কিভাবে বা কিসের ভিত্তিতে দেশ চলবে। সৈদি আরবে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম আবার বাংলাদেশ ,পাকিস্তানেও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম কিন্তু একটি ইসলামী শরিয়া আইনে চলে আর বাকিটা সাধারণ আইনে চলে বা সেক্যুলার আইনে চলে। আবার শুধ রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম, আর ধর্ম নিরপেক্ষ বা সেক্যুলারিজম লেখা নেই তাতেও কোনো সমস্যা নেই , রাষ্ট্রকে শরিয়া আইনে চলতে হবে না সৌদি আরবের মতো   তবে ইসলাম ধর্মের মানুষের ধর্ম চর্চায় স্বাধীনতা বেশি পাবে। 

সেক্যুলারিজম থাকলে শুধু সকল ধর্মীই সমান ও সমান অধিকার, স্বাধীনতা  ভোগ করবে, রাষ্ট্র পরিচালনায় এবং আইন প্রণয়নে ধর্ম প্রাধান্য পাবে না। 
বাংলাদেশ , পাকিস্তান , ভারত , নেপাল ধর্ম নিরেপক্ষ নীতি অনুযায়ী চলে আসছে  ব্রিটিশ ইন্ডিয়া ১৯৪৭ থেকে। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকাই রাষ্ট্রর ইসলাম ধর্ম প্রচার প্রসারে কাজ করা একটি আনুষ্ঠানিক বা অফিসিয়াল দায়িত্ব মাত্র বা এক্ষেত্রে বেশি প্রাধান্য দিবে, আর রাষ্ট্র পরিচালনায় ধর্ম নিরপেক্ষ নীতি মেনে চলতে হবে অর্থাৎ কোনো ধর্মের প্রতি বৈষম্য করা হবে না যেহেতু সংবিধানে বলা আছে পরিচালনার মূলনীতি হল ধর্মনিরপেক্ষ নীতি। অনুচ্ছেদ ২ক দ্বারা হিন্দু , ইসলাম ইত্যাদি ধর্মের কোনো বিধানের বিরুদ্ধে যায় এমন কোনো  আইন হলে তা খুব জোর দিয়ে আটকানো যাবে না, শুধু মাত্র বিবেচনার জন্য অনুরোধ বা আহ্ববান করা যাবে, এমন নয় যে রাষ্ট্র ইসলামী বিধান ১০০% মানতে বাধ্য, ধর্মীয় স্বাধীনতা ৪১ (১) আইন, জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতা সাপেক্ষে হবে।  

তুলনার ক্ষেত্রে এমন হবে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম  লে ইসলাম ধর্ম চর্চায় কিছুটা  প্রাধান্য পাবে যেমন একটি স্থানে মসজিদ ,গির্জা বা মন্দির নির্মাণে, মসজিদ  প্রাধান্য পাবে (100%), অনুচ্ছেদ ২ক অনুসারে সমান অধিকার ও মর্যাদা (99%) পাবে ধর্ম পালনে যেমন অন্য স্থানে একটি গির্জা বা মন্দির করে দিতে হবে, স্কুলে খাবারের ক্ষেত্রে গরুর মাংস খেতে বাধ্য করতে পারব না, আবার সে যদি খেতে চায় বাধাও দিতে পারবে না ।  আবার অনুচ্ছেদ ১২ দ্বারা ধর্ম নিরপেক্ষতাও সীমিত করা হয়েছে ১০০% খুলে দেওয়া হয় নাই যা খুশি আইন অবাধে ধর্মের ব্যাপক বিরুদ্ধে যেয়ে করা যাবে না।  কিন্তু পুলিশে বা আদালতে ইত্যাদি  নিয়োগের ক্ষেত্রে  ইসলাম ধর্মের  মানুষ প্রাধান্য পাবে না, আইন প্রণয়নেও প্রাধান্য পাবে না ।