Wednesday, 8 March 2023

‘শবে বারাত’ ফযীলত ও আমল’’

THE RIGHT THINKING 24

‘শবে বারাত’ ফযীলত ও আমল’’


শাবান মাস মুমিনের আমলের মাস, শাবান মাস মুমিনের আনন্দের মাস, খুশির মাস। আর শাবান মাসের ১৪ তারিখের রাত মুসলমানদের অন্যতম একটি রাত। ভারতীয় উপমহাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশে এ রাত শবে বরাত নামে পরিচিত। হাদিসের ভাষায় এ রাতকে ‘নিসফ শাবান’ বা শাবান মাসের মধ্যরাত বলা হয়। 

এ রাতের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস শরিফে বিবৃত হয়েছে, মুয়াজ ইবনে জাবাল রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলে আরবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাত অর্থাৎ শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে সৃষ্টির প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষপোষণকারী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান : ৫৬৬৫)

হাদিস বিশারদদের ভাষ্যমতে, হাদিসটি সহিহ। এ জন্যই ইমাম ইবনে হিব্বান রহি. তাঁর প্রসিদ্ধ হাদিসের কিতাব ‘কিতাবুস সহিহ’–তে হাদিসটি উল্লেখ করেছেন। তাছাড়া জঈফ হাদিসও আমলের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য।

শবে বরাতে রাসূলে আরাবী সা: যে আমল করতেন-
মর্যাদা ও তেলাওয়াতের ফজিলতগুলো তুলে ধরা হলো-

মধ্য-শাবানের রাত্রিতে দোয়া-মুনাজাত: 

আলেমগণ বলেন, মধ্য শাবানের রজনীর ফযীলত বিষয়ে বর্ণিত তৃতীয় প্রকারের হাদীসগুলোতে এ রাত্রিতে সাধারণভাবে দোয়া করার উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। এ রাতে দোয়া করা, আল্লাহর কাছে নিজের প্রয়োজন মেটানোর জন্য আকুতি জানানো এবং জীবিত ও মৃতদের পাপরাশি ক্ষমালাভের জন্য প্রার্থনার উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। এ অর্থে কোনো সহীহ বা গ্রহণযোগ্য হাদীস নেই। এ অর্থে বর্ণিত হাদীসগুলোর মধ্যে কিছু হাদীস দুর্বল এবং কিছু হাদীস জাল।

এক
পুরো রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি করতেন। যেমন নফল নামাজ পড়া, কুরআন তেলাওয়াত করা, তাসবিহ-তাহলিল পাঠ করা, দুয়া-দুরুদ, তওবা-ইস্তেগফার ইত্যাদি পড়া। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলে আরবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন– পাঁচটি রাত এমন আছে, যে রাতে বান্দার কোনো দোয়া ফেরত দেয়া হয় না। আর তা হলো–জুমআর রাতের দোয়া, রজব মাসের প্রথম রাতের দোয়া, নিসফা শাবান তথা অর্ধ শাবানের রাতের দোয়া, ঈদুল ফিতর তথা রোজার ঈদের রাতের দোয়া, ঈদুল আজহা তথা কুরবানির ঈদের রাতের দোয়া।’ (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক: ৭৯২৭, সুনানুল কুবরা লিল বাইহাকি: ৬৯৮৭)

নির্ধারিত রাক‘আত, সূরা ও পদ্ধতিতে সালাত: 

শবে বরাত বিষয়ক অন্য কিছু হাদীসে এ রাত্রিতে বিশেষ পদ্ধতিতে, বিশেষ সুরা পাঠের মাধ্যমে, নির্দ্দিষ্ট সংখ্যক রাকআত সালাত আদায়ের বিশেষ ফযীলতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মুহাদ্দিসগণের সর্বসম্মত মত অনুযায়ী এই অর্থে বর্ণিত সকল হাদীস বানোয়াট। হিজরী চতুর্থ শতকের পরে রাসুলুলাহ (ﷺ) -এর নামে বানিয়ে এগুলো প্রচার করা হয়েছে।

৩০০ রাক‘আত, প্রতি রাক‘আতে ৩০ বার সূরা ইখলাস

‘‘যে ব্যক্তি মধ্য শাবানের রাতে প্রত্যেক রাকআতে ৩০বার সুরা ইখলাস পাঠের মাধ্যমে ৩০০ রাকআত সালাত আদায় করবে জাহান্নামের আগুন অবধারিত এমন ১০ ব্যক্তির ব্যাপারে তার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।’’ হাদীসটি ইবনুল ক্বাইয়িম বাতিল বা ভিত্তিহীন হাদীস সমূহের মধ্যে উল্লেখ করেছেন।

১০০ রাক‘আত, প্রতি রাক‘আতে ১০ বার সুরা ইখলাস

মধ্য শাবানের রজনীতে এ পদ্ধতিতে সালাত আদায়ের প্রচলন হিজরী চতুর্থ শতকের পরে মানুষের মধ্যে প্রসিদ্ধি লাভ করে। মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিকগণ উল্লেখ করেছেন যে, ৪৪৮ হি. সনে বাইতুল মুকাদ্দাসে প্রথম এ রাত্রিতে এ পদ্ধতিতে সালাত আদায়ের প্রচলন শুরু হয়।[10] এ সময়ে বিভিন্ন মিথ্যাবাদী গল্পকার ওয়ায়িয এ অর্থে কিছু হাদীস বানিয়ে বলেন। এ অর্থে ৪টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে যার প্রত্যেকটিই বানোয়াট ও ভিওিহীন।

এর প্রথমটি আলী (রা)-এর সূত্রে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নামে প্রচারিত: যে ব্যক্তি মধ্য শাবানের রাতে ১০০ রাকআত সালাত আদায় করবে, প্রত্যেক রাকআতে সুরা ফাতিহা ও ১০ বার সুরা ইখলাস পাঠ করবে সে উক্ত রাতে যত প্রয়োজনের কথা বলবে আল্লাহ তায়ালা তার সকল প্রয়োজন পূরণ করবেন। লাওহে মাহফুযে তাকে দুর্ভাগা লিপিবদ্ধ করা হলেও তা পরির্বতন করে সৌভাগ্যবান হিসেবে তার নিয়তি নির্ধারণ করা হবে, আল্লাহ তায়ালা তার কাছে ৭০ হাজার ফিরিশতা প্রেরণ করবেন যারা তার পাপরাশি মুছে দেবে, বছরের শেষ পর্যন্ত তাকে সুউচ্চ মর্যাদায় আসীন রাখবে, এছাড়াও আল্লাহ তায়ালা ‘আদন’ জান্নাতে ৭০ হাজার বা ৭ লাখ ফিরিশতা প্রেরণ করবেন যারা জান্নাতের মধ্যে তার জন্য শহর ও প্রাসাদ নির্মাণ করবে এবং তার জন্য বৃক্ষরাজি রোপন করবে...। যে ব্যক্তি এ নামায আদায় করবে এবং পরকালের শান্তি কামনা করবে মহান আল্লাহ তার জন্য তার অংশ প্রদান করবেন।

এ বিষয়ক দ্বিতীয় জাল হাদীসটিতে জালিয়াতগণ ইবনু উমার (রা)-এর সূত্রে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর নামে বলেছে: ‘‘যে ব্যক্তি মধ্য শাবানের রাতে এক শত রাকআত সালাতে এক হাজার বার সুরা ইখলাস পাঠ করবে তার মৃত্যুর পূর্বে আল্লাহ তা‘য়ালা তার কাছে ১০০ জন ফিরিশতা প্রেরণ করবেন, তন্মধ্যে ত্রিশজন তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিবে, ত্রিশজন তাকে জাহান্নমের আগুন থেকে নিরাপত্তার সুসংবাদ প্রদান করবে, ত্রিশজন তাকে ভুলের মধ্যে নিপতিত হওয়া থেকে রক্ষা করবে এবং দশজন তার শত্রুদের ষড়যন্ত্রের জবাব দেবে।’’

এ বিষয়ক তৃতীয় জাল হাদীসটিতে মিথ্যাবাদীগণ বিশিষ্ট তাবিয়ী ইমাম আবু জাফর মুহাম্মাদ আল বাকির (১১৫ হি) থেকে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর বরাতে বর্ণনা করেছে: ‘‘যে ব্যক্তি মধ্য শাবানের রাতে ১০০ রাকআত সালাতে ১০০০ বার সুরা ইখলাস পাঠ করবে তার মৃত্যুর পূর্বেই মহান আল্লাহ তার কাছে ১০০ ফিরিশতা প্রেরণ করবেন। ৩০ জন তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিবে, ৩০ জন তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দিবে, ৩০ জন তার ভুল সংশোধন করবে এবং ১০ জন তার শত্রুদের নাম লিপিবদ্ধ করবে।’’
৫০ রাক‘আত, ১৪ রাক‘আত, ১২ রাক‘আত, প্রত্যেক রাক‘আতে ৩০ বার সূরা ইখলাস
সুতরাং এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কিয়ামুল লাইল অর্থাৎ নফল নামাজে দীর্ঘ কিরাত পড়া এবং লম্বা সেজদা করা এ রাতের বিশেষ একটি আমল।

পরদিন রোজা রাখতেন। এমনিতে পুরো শাবান মাসেই অধিক পরিমানে রোজা রাখা উত্তম। রাসূলে আরবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায় পুরো শাবান মাস রোজা রাখতেন। ফাতিমা রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন– আমি রাসূলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শাবান ও রমযান ছাড়া দুই মাস একাধারে রোজা রাখতে দেখিনি। (সহিহ বুখারি: ১৯৬৯, সহিহ মুসলিম: ১১৫৬) 

আরেক হাদিসে আলি ইবনে আবু তালিব রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 'যখন মধ্য শাবানের রাত আসে, তখন তোমরা এ রাতে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ো এবং দিনে রোজা রাখো। কেননা এদিন সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর নিকটতম আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আছো আমার নিকট ক্ষমাপ্রার্থী? আমি তাকে ক্ষমা করবো। কে আছো রিজিকপ্রার্থী? আমি তাকে রিজিক  দেব। কে আছো রোগমুক্তি চাও? আমি তাকে সুস্থতা দেব। কে আছো এই এই চাও?' এভাবে ফজরের সময় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ১৬২)
মধ্য শাবানের রাত্রিতে ভাগ্য লিখন

কিছু কিছু হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ রাত্রিতে ভাগ্য অনুলিপি করা হয় বা পরবর্তী বছরের জন্য হায়াত-মউত ও রিযক ইত্যাদির অনুলিপি করা হয়। হাদীসগুলোর সনদ বিস্তারিত আলোচনা করেছি উপর্যুক্ত পুস্তকটিতে। এখানে সংক্ষেপে বলা যায় যে, এ অর্থে বর্ণিত হাদীসগুলো অত্যন্ত দুর্বল অথবা বানোয়াট। এ অর্থে কোনো সহীহ বা গ্রহণযোগ্য হাদীস বর্ণিত হয় নি।

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একদিন নাজরানের সাতজন খ্রিস্টান পাদ্রি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। অতপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন-
‘আমাদের বলুন, আপনার রব কেমন? তিনি কিসের তৈরি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার রব কোনো জিনিসের তৈরি নয়। তিনি সব বস্তু থেকে আলাদা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা সুরা ইখলাস নাজিল করেন।

সুরা ইখলাসের ফজিলত
সুরা ইখলাস-এর ভাব ও মর্মার্থ বুঝে পড়লে তাতে বান্দার অন্তরে আল্লাহর গুণাবলী গেঁথে যাবে। মনে প্রাণে ওই ব্যক্তি হয়ে উঠবে শিরকমুক্ত ঈমানের অধিকারী হবে। আর তার বিনিময়ে সে লাভ করবে দুনিয়া ও পরকালের অনেক উপকারিতা ও ফজিলত।

আল্লাহর ভালোবাসা লাভ, সুরা ইখলাসের বিষয়বস্তু

আল্লাহ তাআলা তার পরিচয় তুলে ধরতে গিয়ে সুরা ইখলাসের ৪ আয়াতের মাধ্যমে ৪টি বিষয় তুলে ধরেছেন। আর তাহলো-

- আল্লাহ এক। এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা তার একত্ববাদের সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন।
- তিনি অমুখাপেক্ষী। এ আয়াতে তিনি কোনো কিছুতেই মুখাপেক্ষী নন। কারো কাছে তার কোনো প্রয়োজন নেই। সব কিছুতেই তিনিই যথেষ্ট।
- তার জন্ম-সৃষ্টিতে কারো কোনো হাত নেই। তিনি কারো জনক নন আবার তাকে কেউ জন্ম দেননি। তিনি জন্ম-সৃষ্টি দেয়া ও হওয়া থেকে পূত-পবিত্র এবং মুক্ত।
- জন্মের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই এবং চতুর্থ আয়াতে বলা হয়েছে, তিনি অতুলনীয়। চারটি আয়াতের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, তাওহিদ বা আল্লাহর একত্ববাদ।
- তার সমকক্ষ কেউ নেই। অর্থাৎ তিনি যে এক ও একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী। তার ওপর তাকিদ করা হয়েছে, সত্যয়ন করা হয়েছে যে, তার সমকক্ষ কেউ নেই।

সুরাটির মর্যাদা
সুরা ইখলাস অনন্য মর্যাদা সম্পন্ন ৪ আয়াত বিশিষ্ট ছোট্ট একটি সুরা। সুরাটিকে কুরআনের ৩ ভাগের এক ভাগ ঘোষণা করা হয়েছে।

জান্নাত লাভ
একবার এক সাহাবা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি সুরা ইখলাসকে ভালোবাসি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বলেন, এ ভালোবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।’ (বুখারি, তিরমিজি)

গোনাহ থেকে মুক্তি
 দারিদ্র্যতা থেকে মুক্তি; যে ব্যক্তি এ সুরাটির মর্মার্থ বুঝে আল্লাহর বিশেষ গুণাবলীগুলো হৃদয়ে ধারণ করবে সে আল্লাহর একত্ত্ববাদ ও ক্ষমতায় একনিষ্ঠ বিশ্বাসী হিসেবে বেড়ে উঠবে। সে হবে প্রকৃত ঈমানদার। আল্লাহ তাআলার দরবারে এ গুণাবলীর বিশ্বাসই তাকে মর্যাদাবাদ করে দেবে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন ২০০ বার সুরা ইখলাস পড়বে, তার ৫০ বছরের গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। তবে ঋণগ্রস্ত হলে তা ক্ষমা হবে না।’ (তিরমিজি)

হাদিসের ভাষায় ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ তথা ১৫ শাবানের রাত। ‘শবে বরাত’ ফারসি শব্দ। ‘শব’ শব্দের অর্থ রাত, ‘বরাত’ অর্থ নাজাত বা মুক্তি। এই দুই শব্দ মিলে অর্থ হয় মুক্তির রজনী।
 

আলেমগনের উপরোক্ত আলোচনায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় যে আলেমদের মধ্যে বিভিন্ন মত রয়েছে এবং তার পেছনে কারণ ও আছে অর্থাৎ যথার্থ এবং উচ্চ পর্যায়ের দলিল প্রমান ছাড়া কোনো শরীয়ত বা বিধান চর্চার কথা বলা যায় না বা কঠিন তাহলে বিদআত হয়ে যাবে যা ভয়াবহ পাপ, যাইহোক সাধারণ মানুষ হিসেবে আমাদের এটুকু বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না যে এসব এবাদাত গুলো সবই নফল বা ব্যাক্তির স্বাধীন ইচ্ছাধীন এবাদত ব্যাক্তি হিসেবে কেউ এসব এই রাত্রিতে বা যে কোনো রাত্রিতে করলে তাহাজ্জত নামাজের সওয়াব পেয়ে যাবে আবার বিভিন্ন ফজিলতপূর্ণ সূরার  ধারা নামাজ পড়লে সওয়াব একটু বেশি পাবে। তুলনামূলক ধর্ম পড়াশুনা ও কুরআন হাদীস থেকে জানা যায় যে পূর্ববর্তী উম্মতের জন্য রাতের নামায ছিল ।

আর শুধু মূর্তিপূজারী মুশরেক নয়, মুমিন খ্রিষ্টান, ইহুদি, ছোট মুশরেক, আলেম বা পাদ্রী ও মুসলিম হয়ে ইসলাম গ্রহণ করে তখন তারা তাদের পূর্ববর্তী এবাদতের কথাও নবীজীকে বলতো এবং অনেকে খুবই উচ্চ পর্যায়ের সাহাবী ও হন, এমনকি আদমের পরের সময় সনাতন ধর্মের এমন কিছু ইবাদত জানা যায় যে একটি গরু, ছাগলের লোমের সমান সওয়াব হবে, তখন নবীজি হয়তো একেক সাহাবীর কথার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন সূরা ও রাতের এবং নামাজের ব্যবহার বিধি শিখিয়েছেন যা ব্যাক্তি থেকে ব্যাক্তিতে যা একটি নফল নামাজ যা একটি নির্দিষ্ট বাধ্যতামূলক ফরজ নিয়ম নয় আর যে নামাজটি নফল হলেও দ্বিনি একটি শরিয়াত বা নিয়মিত চর্চার বিষয় তা নবীজি সকলকেই ডেকে একত্রে বলেছেন যাতে পরবর্তী সকল উম্মত তা হুবহু চর্চা করে যেতে থাকে যেমন গভীর রাতের তাহাজ্জদ নামাজ । আর এই রাতের নামায মূলত রমাদান মাসের পূর্ব প্রস্তিত একটি রাতে বা সতর্কতা দেওয়া যে সামনে রোজা আসতেছে প্রস্তুতি গ্রহণ করো কারণ তাদের অবস্থা এতটা স্বছল প্রস্তুতির একটি ব্যাপার হতে পারে ।

তাই ফজিল সুনির্দিষ্ট কিছু না থাকলেও অন্য সাধারণ রাত থেকে যে একটু হলেও বেশি তা স্পষ্ট আর সকলকে নিয়ে প্রতিনিয়ত করলে তা একটি ফরজ বা ফরজের কাছাকাছি হয়ে যাবে তাই নবীজি কম গুরুত্বপূর্ণ বিধান সবসময় উম্মত থেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করেছেন এবং বলেছেন যে আমি যা করি তোমরা তা পারবে না তোমাদের তা করার দরকার নেই , আমি যা করতে বলি শুধু ঐটুকু করে যাও তাতেই জান্নাত মিলবে  ।

আরো বহু নামাজ নম্বা সারারাত জেগে সিজদা দিয়ে তিনি পড়তেন উম্মতের মুক্তির জন্য যা খুবই কষ্টের উম্মতের পক্ষ থেকে । তাই মানুষজন চাইলে অবশ্যই নামাজ ইবাদত দুয়া দুরুত করতে পারে যে এটি একটি পবিত্র রাত ও মর্যাদাপূর্ণ , এক্ষেত্রে এটা বিদআত হবে না তবে এবাদাত না করলে পাপ হবে মনে করলে বিদআত হবে।

আয়েশা রা: বলেন– একবার রাসূলে আরবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নামাজে দাঁড়িয়ে এতো দীর্ঘ সময় সেজদায় রইলেন যে, আমার ধারণা হলো হয়ত তিঁনি মৃত্যুবরণ করেছেন। তখন আমি তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিয়ে দেখলাম। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা ওহে হুমাইরা, তোমার কি আশঙ্কা হয়েছে যে, রাসূলে আরবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না, হে রাসূলুল্লাহ আপনার দীর্ঘ সেজদায় আমার আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা।

রাসূলে আরবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসূলই ভাল জানেন। তখন রাসূলে আরবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন– ‘এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত অর্থাৎ শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত।


এই রাত নিঃসন্দেহে ফজিলতপূর্ণ। এ নিয়ে যেমন বাড়াবাড়ি করা উচিত নয়, তেমনিভাবে এই রাতের ফজিলতও অনস্বীকার্য। তাই  অর্থনৈতিক সংকটময় পরিস্থিতিতে আমাদের এই রাতে আল্লাহর দিকে মনোযোগী হই, বেশি–বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং বিশুদ্ধ আমলের মাধ্যমে শবে বরাতের ফজিলত, বরকত ও মাগফিরাত হাসিল করি। সব ধরনের রুসম-রেওয়াজ ও বিদআত বর্জন করি। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।



No comments:

Post a Comment