মানবজাতির সংবিধান অনুযায়ীও খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা ও ধর্মীয় স্বাধীনতাকে মৌলিক অধিকার ঘোষণা করা হয়।
মৌলিক অধিকার:
অধিকার কত প্রকার ও কী কী?
অধিকার প্রধানত দুই প্রকার। যথা- ১। নৈতিক অধিকার ও ২। আইনগত অধিকার ।
১. নৈতিক অধিকার : নৈতিক অধিকার মানুষের বিবেক এবং সামাজিক নৈতিকতা বা ন্যায়বোধ থেকে আসে । যেমন- দুর্বলের সাহায্য লাভের অধিকার নৈতিক অধিকার। এটি রাষ্ট্র কর্তৃক প্রণয়ন করা হয় না যার ফলে এর কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। তাছাড়া এ অধিকার ভঙ্গকারীকে কোনো শাস্তি দেওয়া হয় না । নৈতিক অধিকার বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন রকম হতে পারে।
আইনগত অধিকার : যেসব অধিকার রাষ্ট্রের আইন কর্তৃক স্বীকৃত ও অনুমোদিত, সেগুলোকে আইনগত অধিকার বলে। আইনগত অধিকারকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- ক. সামাজিক খ. রাজনৈতিক ও গ. অর্থনৈতিক অধিকার ।
ক. সামাজিক অধিকার : সমাজে সুখ-শান্তিতে বসবাস করার জন্য আমরা সামাজিক অধিকার ভোগ করি । যেমন- জীবন রক্ষার, স্বাধীনভাবে চলাফেরার ও মত প্রকাশের, পরিবার গঠনের, শিক্ষার, আইনের দৃষ্টিতে সমান সুযোগ লাভের, সম্পত্তি লাভের ও ধর্মচর্চার অধিকার ইত্যাদি ।
খ. রাজনৈতিক অধিকার : নির্বাচনে ভোটাধিকার, নির্বাচিত হওয়া এবং সকল প্রকার অভাব-অভিযোগ আবেদনের মাধ্যমে প্রতিকার পাওয়াকে রাজনৈতিক অধিকার বলে। এসব অধিকার ভোগের বিনিময়ে নাগরিকরা রাষ্ট্র পরিচালনায় পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ পায় ।
গ. অর্থনৈতিক অধিকার: জীবনধারণ করা এবং জীবনকে উন্নত ও এগিয়ে নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপ্রদত্ত অধিকারকে অর্থনৈতিক অধিকার বলে । যেমন- যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করার অধিকার, ন্যায্য মজুরি লাভের অধিকার, অবকাশ লাভের অধিকার, শ্রমিকসংঘ গঠনের অধিকার ।
[Copied from SATT ACADEMY. Visit us at:https://sattacademy.com]
নাগরিকের কর্তব্য:
রাষ্ট্রের নিকট নাগরিকের যেমন অধিকার রয়েছে, অনুরূপ রাষ্ট্রের প্রতিও নাগরিকের কর্তব্য রয়েছে । কর্তব্য পালন ব্যতীত অধিকার ভোগ করা প্রত্যাশিত নয়। বিভিন্ন অধিকার প্রদানের মাধ্যমে রাষ্ট্র নাগরিকদের নিজের প্রতি অনুগত ও দায়িত্বশীল করে তোলে। রাষ্ট্র প্রদত্ত অধিকারের মাধ্যমে নাগরিক জীবন বিকশিত হয় । এর বিনিময়ে রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থাকা, সততার সাথে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা, নিয়মিত কর প্রদান করা, আইন মান্য করা এবং রাষ্ট্রপ্রদত্ত অন্যান্য দায়িত্ব পালন নাগরিকদের কর্তব্য ।
জাতিসংঘের উদ্দেশ্য:
বিশ্বশান্তি ও সহযোগিতার মহান লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত জাতিসংঘের উদ্দেশ্যগুলো হলো-
১. শান্তির প্রতি হুমকি ও আক্রমণাত্মক কার্যকলাপ প্রতিরোধ করে বিশ্ব শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; ও
২. সকল মানুষের সমান অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের মধ্যে সম্প্রীতি বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করা;
৩. অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবসেবামূলক সমস্যার সমাধানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা গড়ে ভোলা:
৪. জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা ও নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকারের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ গড়ে তোলা; এ
৫. আন্তর্জাতিক আইনের সাহায্যে আন্তর্জাতিক বিবাদের মীমাংসা করা।
অথাৎ জাতিসংঘের উদ্দেশ্য বিশ্বশান্তি, নিরাপত্তা , ঐক্যবদ্ধতা ও আর্থ -সামাজিক, সাংস্কৃতিক উন্নয়ন বাস্তবায়ণ ও প্রচার প্রসার করা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার আওতায় সাধ্যমতো সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তাকে ডেকে, প্রার্থনা করে সওয়াব অর্জন করা আর সাধারণভাবে এসবই মানবাধিকার ও আইনের শাসন । বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ীও খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা ও ধর্মীয় স্বাধীনতাকে মৌলিক অধিকার ঘোষণা করা মাত্রই সব নাগরিকের জন্য এসব মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতা দুটোই রাষ্ট্রের কাঁধে কঠোরভাবে বর্তায়। যেহেতু মৌলিক অধিকার আদালতের মাধ্যমে বলবৎযোগ্য ও আইনের মাধ্যমে দাবি করার সুযোগ রয়েছে।
মানবাধিকার ও আইনের শাসনের মধ্যে স্বাধীনতার বিভিন্ন রুপ:
স্বাধীনতা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন- ১। ব্যক্তি স্বাধীনতা, ২। সামাজিক স্বাধীনতা, ৩ । রাজনৈতিক স্বাধীনতা, ৪ । অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও ৫। জাতীয় স্বাধীনতা ।
১. ব্যক্তি স্বাধীনতা : ব্যক্তি স্বাধীনতা বলতে এমন স্বাধীনতাকে বোঝায়, যে স্বাধীনতা ভোগ করলে অন্যের কোনো ক্ষতি হয় না । যেমন- ধর্মচর্চা করা ও পারিবারিক গোপনীয়তা রক্ষা করা। এ ধরনের স্বাধীনতা ব্যক্তির একান্ত নিজস্ব বিষয় ।
২. সামাজিক স্বাধীনতা : জীবন রক্ষা, সম্পত্তি ভোগ ও বৈধ পেশা গ্রহণ করা সামাজিক স্বাধীনতার অন্তর্ভুক্ত । এ ধরনের স্বাধীনতা ভোগের মাধ্যমে নাগরিক জীবন বিকশিত হয় । সমাজে বসবাসকারী মানুষের অধিকার রক্ষার জন্যই সামাজিক স্বাধীনতা প্রয়োজন। এই স্বাধীনতা এমনভাবে ভোগ করতে হয় যেন অন্যের অনুরূপ স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ না হয় ।
৩. রাজনৈতিক স্বাধীনতা : ভোটদান, নির্বাচিত হওয়া, বিদেশে অবস্থানকালীন নিরাপত্তা লাভ ইত্যাদি নাগরিকের রাজনৈতিক স্বাধীনতা। এসব স্বাধীনতার মাধ্যমে ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় শাসনকাজে অংশগ্রহণের সুযোগ লাভ করে । গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক স্বাধীনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
8. অর্থনৈতিক স্বাধীনতা : যোগ্যতা অনুযায়ী পেশা গ্রহণ এবং উপযুক্ত পারিশ্রমিক লাভ করাকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বলা হয়। মূলত আর্থিক সুবিধা প্রাপ্তির জন্য নাগরিকরা অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ভোগ করে । এই স্বাধীনতা না থাকলে অন্যান্য স্বাধীনতা ভোগ করা যায় না। সমাজের অন্য শ্রেণির শোষণ থেকে মুক্ত থাকার জন্য অর্থনৈতিক স্বাধীনতা প্রয়োজন ।
৫. জাতীয় স্বাধীনতা : বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র এবং অন্য রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত । বাংলাদেশের এই অবস্থানকে জাতীয় স্বাধীনতা বা রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা বলে । এই স্বাধীনতার ফলে একটি রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের কর্তৃত্বমুক্ত থাকে । প্রত্যেক স্বাধীন রাষ্ট্র জাতীয় স্বাধীনতা ভোগ করে ।
ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্টের আইনের শাসনের ২০২৪ সালের সূচক অনুযায়ী, বাংলাদেশ ১৪২ দেশের মধ্যে ১২৭তম অবস্থানে রয়েছে। আধুনিক যুগে অন্যতম জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য কনসেপ্ট হলো ওয়েলফেরার স্টেট বা কল্যাণমূলক রাষ্ট্র। ওয়েলফেয়ার স্টেট এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা, যেখানে সরকার জনগণের মৌলিক জীবনমান নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সেবা ও সুবিধা প্রদান করে।
এই রাষ্ট্রে সরকারের মূল লক্ষ্য হলো জনগণের কল্যাণ এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যাতে প্রত্যেক নাগরিকের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয় এবং নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত থাকে।
ওয়েলফেয়ার স্টেট হিসেবে পরিচিত দেশগুলো যেমন ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, সুইডেনের মতো দেশ এসব অধিকার কয়েকটিকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, তেমনিভাবে বাংলাদেশের মতো অনেক উন্নয়নশীল দেশও এসব অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা, ইন্দোনেশিয়া, আর্জেন্টিনা ও তানজানিয়ার মতো দেশ এই অধিকারগুলোর বেশির ভাগকেই মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
সংবিধানিক মৌলিক অধিকার
মৌলিক অধিকার বলতে রাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য সংবিধান স্বীকৃত কিছু অধিকারকে বোঝায়, যা ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য অপরিহার্য এবং যা রাষ্ট্রের আইন দ্বারা সংরক্ষিত।
মৌলিক অধিকার সাধারণত সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত এবং লঙ্ঘিত হলে আদালতের আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ থাকে। এটি ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, সমতা, ধর্ম, মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, শিক্ষার অধিকার, সম্পত্তির অধিকার, ইত্যাদি বিভিন্ন দিক অন্তর্ভুক্ত করে।
সংক্ষেপে, মৌলিক অধিকারগুলো হলো:
আইনের দৃষ্টিতে সমতা:
সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং তাদের প্রতি বৈষম্য করা যাবে না।
জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার:
প্রত্যেক নাগরিকের জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতা রক্ষার অধিকার রয়েছে।
ধর্মের স্বাধীনতা:
প্রত্যেক নাগরিকের নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা থাকবে।
বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা:
প্রত্যেক নাগরিকের মত প্রকাশ ও বাকস্বাধীনতা থাকবে।
সংগঠন ও সমাবেশের স্বাধীনতা:
প্রত্যেক নাগরিকের সংগঠন ও শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশের স্বাধীনতা থাকবে।
চলাফেরার স্বাধীনতা:
প্রত্যেক নাগরিকের দেশের অভ্যন্তরে অবাধে চলাফেরা ও বসতি স্থাপনের স্বাধীনতা থাকবে।
শিক্ষার অধিকার:
প্রত্যেক নাগরিকের জন্য শিক্ষা লাভের অধিকার থাকবে।
সম্পত্তির অধিকার:
প্রত্যেক নাগরিকের সম্পত্তি অর্জন ও রক্ষণাবেক্ষণের অধিকার থাকবে।
সংবিধানিক প্রতিকারের অধিকার:
কোনো নাগরিকের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হলে, তিনি আদালতের মাধ্যমে প্রতিকার চাইতে পারবেন।
এগুলো ছাড়াও, আরও কিছু মৌলিক অধিকার রয়েছে যা বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত ও সুরক্ষিত হতে পারে।
[www.google.com]
আইনের মাধ্যমেই মূলত মৌলিক অধিকারগুলো বিশ্ব সমাজে ও রাষ্ট্রে বাস্তবায়ন করতে হয়। আইন প্রণয়নে মৌলিক যে বিষয়গুলো প্রাধান্য দেওয়া হয় তা মূলত আইনের উৎস:
আইনের উৎপত্তি বিভিন্ন উৎস থেকে হতে পারে । আইনের উৎসগুলো নিম্নে বর্ণিত হলো ।
১. প্রথা : দীর্ঘকাল যাবৎ কোনো নিয়ম সমাজে চলতে থাকলে তাকে প্রথা বলে। রাষ্ট্র সৃষ্টির পূর্বে প্রথার মাধ্যমে মানুষের আচরণ নিয়ন্ত্রণ হতো । রাষ্ট্র সৃষ্টির পর যেসব প্রথা রাষ্ট্র কর্তৃক অনুমোদন লাভ করে সেগুলো আইনে পরিণত হয়। যুক্তরাজ্যের অনেক আইন প্রথার উপর ভিত্তি করে সৃষ্টি হয়েছে।
২. ধর্ম : ধর্মীয় অনুশাসন ও ধর্মগ্রন্থ আইনের অন্যতম উৎস। সকল ধর্মের কিছু অনুশাসন রয়েছে যা ঐ ধর্মের অনুসারীরা মেনে চলে। এসব অনুশাসন সমাজ জীবনকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত করতে সহায়তা করে । ফলে এসব ধর্মীয় অনুশাসনের অনেক কিছুই পরবর্তীকালে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি লাভের মাধ্যমে আইনে পরিণত হয় । যেমন- মুসলিম আইন, হিন্দু আইন প্রভৃতি । আমাদের দেশে পারিবারিক ও সম্পত্তি আইনের অনেকগুলো উপরে উল্লেখিত দুটি ধর্ম থেকে এসেছে ।
৩. আইনবিদদের গ্রন্থ : আমরা যখন গল্প, উপন্যাস কিংবা খবরের কাগজ পড়ি, কোনো শব্দের অর্থ বুঝতে সমস্যা হলে অভিধান ও বিশ্বকোষের সাহায্য নিই। ঠিক তেমনি, বিচারকগণ কোনো মামলার বিচারকার্য সম্পাদন করতে গিয়ে আইন সংক্রান্ত কোনো সমস্যায় পড়লে তা সমাধানের জন্য আইন- বিশারদদের বিজ্ঞানসম্মত গ্রন্থের সাহায্য নিয়ে এসব আইন ব্যাখ্যা করেন যা পরবর্তীকালে আইনে পরিণত হয়। যেমন- অধ্যাপক এ ভি ডাইসির ‘দ্যা ল অব দ্যা কনস্টিটিউশন' এবং উইলিয়াম ব্লাকস্টোনের ‘কমেনটরিজ অন দ্যা লজ অব ইংল্যান্ড' ।
৪. বিচারকের রায় : আদালতে উত্থাপিত মামলার বিচার করার জন্য প্রচলিত আইন অস্পষ্ট হলে বিচারকগণ তাদের প্রজ্ঞা ও বিচারবুদ্ধির উপর ভিত্তি করে ঐ আইনের ব্যাখ্যা দেন এবং উক্ত মামলার রায় দেন । পরবর্তীকালে বিচারকগণ সেসব রায় অনুসরণ করে বিচার করেন। এভাবে বিচারকের রায় পরবর্তীকালে আইনে পরিণত হয় । সুতরাং বলা যায়, বিচারকের রায় আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস ।
৫. ন্যায়বোধ : আদালতে এমন অনেক মামলা উত্থাপিত হয় যা সমাধানের জন্য অনেক সময় কোনো আইন বিদ্যমান থাকে না। সে অবস্থায় বিচারকগণ তাদের ন্যায়বোধ বা বিবেক দ্বারা উক্ত মামলার বিচারকাজ সম্পাদন করেন এবং পরবর্তী সময়ে তা আইনে পরিণত হয় ।
৬. আইনসভা : আধুনিককালে আইনের প্রধান উৎস আইনসভা। জনমতের সাথে সঙ্গতি রেখে বিভিন্ন দেশের আইনসভা নতুন আইন প্রণয়ন করে এবং পুরাতন আইন সংশোধন করে যুগোপযোগী করে তোলে।
আইন প্রণয়নের মাধ্যমেই মূলত এসব গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য সমূহ নিশ্চিত করা হয় :
গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে প্রধান হলো জনগণের সার্বভৌমত্ব, যেখানে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সরকার গঠন করে এবং জনগণের মতেই দেশ পরিচালিত হয়। এছাড়াও, গণতন্ত্রে আইনের শাসন, নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সকলের জন্য সমান সুযোগ এবং স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকে।
গণতন্ত্রের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নিচে উল্লেখ করা হলো:
জনগণের সার্বভৌমত্ব:
গণতন্ত্রে চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী জনগণ। জনগণ তাদের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সরকার গঠন করে এবং তাদের মাধ্যমেই দেশ পরিচালিত হয়।
আইনের শাসন:
গণতন্ত্রে আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান এবং আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়।
মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা:
গণতন্ত্রে প্রত্যেক নাগরিকের ব্যক্তি স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা, সংগঠনের স্বাধীনতা, এবং ধর্ম পালনের স্বাধীনতা সহ বিভিন্ন মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত থাকে।
সকলের জন্য সমান সুযোগ:
গণতন্ত্রে সকল নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হয়, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে সবাই সমান মর্যাদা পায়।
স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক সরকার:
গণতন্ত্রে সরকারের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়। সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকে এবং জনগণ সরকারের কাজের হিসাব চাইতে পারে।
নিয়মিত নির্বাচন:
গণতন্ত্রে নিয়মিত নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হতে পারে।
সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা:
গণতন্ত্রে সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা করা হয় এবং তাদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হয়।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা:
গণতন্ত্রে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করে এবং সরকারের হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত থাকে।
মত প্রকাশের স্বাধীনতা:
গণতন্ত্রে যে কেউ তার মতামত প্রকাশ করতে পারে এবং সেই মতামতকে সম্মান জানানো হয়।
গণতন্ত্র একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া এবং এর বৈশিষ্ট্যগুলো একটি সমাজের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।